- Back to Home »
- Spotlight »
- অর্থমন্ত্রীর কাছে মোবাইল অপারেটররা
collected
মোবাইল অপারেটররা ১০ সেকেন্ড পালস দেবে না। তারা বিটিআরসিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ১০ সেকেন্ড পালস দিলে তাদের ব্যবসা হবে না। দশ সেকেন্ড পালস দিলে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে না অপারেটররা। এর আগে টু জি লাইসেন্স (দ্বিতীয় প্রজন্মের ফোন) নবায়নের বেলায় অপারেটরদের প্রতি মেগাহার্জ স্পেক্ট্রাম ফি ধরা হয়েছিল তিন শ’ কোটি টাকা। তখনও তারা এক জোট হয়ে সেই ফি দেড় শ’ কোটিতে নামিয়ে নিয়েছে। অথচ পাশের দেশ ভারতে প্রতি মেগাহার্জ স্পেক্ট্রামের দাম প্রায় চার শ’ কোটি টাকা। গ্রাহকদের ঠকাতেই মোবাইল অপারেটররা গাঁটছড়া বেঁধেছে। তারা যৌথভাবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে না গিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে ধর্ণা দিয়েছে। অপারেটরদের যেখানেই স্বার্থের বিঘ্ন ঘটে সেখানেই তারা এক হয়ে যায়। এবার ১০ সেকেন্ড পালসের বেলাও তারা জোট বেঁধে এর বিরোধিতা করে যাচ্ছে। বিটিআরসি গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সরকারী অপারেটর টেলিটক বাদে ৫টি বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর লিখিতভাবে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদনও জানিয়েছে। সম্প্রতি সম্মিলিতভাবে; আবেদন জানায় তারা। অপারেটররা আবেদনে উল্লেখ করেছে, ১০ সেকেন্ড পালস দিলে তাদের পথে বসতে হবে, তাদের কোন ব্যবসা থাকবে না। সরকারকে উচ্চমাত্রায় ট্যাক্স দিয়ে তাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। এখন ১০ সেকেন্ড পালস দিলে তাদের লাভের পুরোটাই চলে যাবে। গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, রবি, বাংলালিংক ও সিটিসেলের পক্ষে এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা যৌথভাবে বিটিআরসির বেঁধে দেয়া প্রতিকলে ১০ সেকেন্ড পালস বাতিলের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। এ ৫টি ফোন কোম্পানির কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রীর কাছে বিটিআরসির চাপিয়ে দেয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেন। বিটিআরসির এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে। অপারেটররা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) জিয়া আহমেদ বলেন, যখন ১৪ টাকা মিনিট কল রেট ছিল তখন রাজস্ব পাওয়া গেছে ৩ কোটি টাকা। এখন ৮৩ পয়সা মিনিট কল রেট। রাজস্ব আদায় হচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের সব গ্রাহক ১০ সেকেন্ড বিলিং সাইকেলকে সমর্থন জানিয়েছে। বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের যেমন ব্যবসায়ী সমস্যা দেখে তেমনি গ্রাহকদের সুবিধাও দেখবে। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে গ্রাহকদের কোন স্বার্থ বিটিআরসি দেখবে না। বিদেশী অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাবে এটা মেনে নেবে না। গ্রাহকদের সুবিধার কথাও চিন্তা করতে হবে। ভারতে এক সেকেন্ড পালস রয়েছে। ১০ সেকেন্ড পালস না মানলে ‘রিয়েল টাইম‘ (যতটুকু সময় কথা বলা ততটুকু সময়ের বিল নেয়া) কল আরোপ করা হবে। একজন গ্রাহক যত সেকেন্ড কথা বলবে ঠিক তত সেকেন্ডের বিল নিতে হবে অপারেটরদের। তারা অর্থমন্ত্রীর কাছে গেছে। সেখান থেকে যদি জানতে চাওয়া হয় তাহলে আমি তার জবাব দেব। ১০ সেকেন্ড কল সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত। ১৫ বছর তারা ব্যবসা করে গেছে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। এখন গ্রাহকদের সুযোগ দেয়ার পালা। গ্রাহকদের গলা কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে দেয়া হবে না। বহু আগে থেকে গ্রাহকরা কল করার পর নেটওয়ার্কের কারিগরি ত্রুটি দেখিয়ে প্রতিনিয়তই কল ড্রপের মতো ঘটনা ঘটছে। এরপর পুনর্সংযোগে প্রতি এক মিনিট বা পূর্ণ পালসের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে অপারেটররা কল ড্রপ করিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে বিষয়টি নিয়ে কমিশনে আলোচনার পর ১০ সেকেন্ড পালস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি অপারেটর প্রতিকলে ১০ সেকেন্ড পালস দিতে বাধ্য। গ্রাহকসেবার জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন অপারেটর এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, গত ১৫ আগস্ট থেকে প্রতিটি মোবাইল অপারেটরকে ১০ সেকেন্ড পালস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অপারেটররা এ নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিটিআরসির বেঁধে দেয়া সময়সীমা ১০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু কোন অপারেটর নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো তারা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বা বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ না করে অর্থমন্ত্রীর কাছে গেছে। এর আগে অনেক বড় সমস্যাও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করা হয়েছে। তারা হঠাৎ অর্থমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আবেদন জানিয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় প্রতিদিন কত টাকা তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের ঠকিয়ে তারা বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, ৫ মোবাইল অপারেটর কেন নির্দেশ অমান্য করে ১০ সেকেন্ড পালস দিচ্ছে না তা জানতে অপারেটরদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এ চিঠির কোন জবাব এখন পর্যন্ত ৫ অপারেটর দেয়নি। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বিটিআরসি জরুরী বৈঠক করেছে। ধনী-গরিব মানুষের টাকা শুষে নিতে দেয়া হবে না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপারেটরদের আইন মেনেই চলতে হবে। টেলিটক ১০ সেকেন্ড পালস কার্যকর করেছে। অন্যদের বাস্তবায়ন করতে কেন বাধা। টেলিটকের সমস্যা না হলে তাদের কেন সমস্যা হবে? ৫ সেকেন্ড কথা বলার পর পুরো কলের টাকা কেটে নিচ্ছে তারা। প্রতিদিন ৩ থেকে ৯ সেকেন্ড কলের পরিমাণ কয়েক কোটি। যদি ১০ সেকেন্ড পালস থাকে তাহলে তারা পুরো কলের টাকা কেটে নিতে পারবে না। তখন ১০ সেকেন্ডের টাকাই পাবে অপারেটররা। প্রতিকলে ২ থেকে আড়াই টাকা কেটে নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। এ বিষয়ে অপারেটরদের কাছে দেয়া চিঠির সঠিক জবাব না পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, সব প্যাকেজে ১০ সেকেন্ড পালস কার্যকর হলে মোবাইল ফোনের আয় কমে যাবে। আয় কমে গেলে লোকবল ছাঁটাই করতে হবে। এতে বড় রকমের সমস্যা দেখা দেবে। এ কারণেই অপারেটররা অর্থমন্ত্রীর কাছে ১০ সেকেন্ড পালস উঠিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেছে।
মোবাইল অপারেটরদের অযৌক্তিক যুক্তিকে খ-ন করে বিটিআরসি বলছে, গ্রাহকরা সুবিধা পেলে মোবাইলের গ্রাহক আরও বেড়ে যাবে। এতে অপারেটররা বেশি গ্রাহক পাবে। বেশি গ্রাহক পেলে তাদের লাভের অঙ্কও বাড়বে। অপারেটরদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেই ১০ সেকেন্ড পালস দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। আর এটি বাস্তবায়নের দিন ছিল গত ১৫ আগস্ট। কিন্তু তারা এ নির্দেশ এখনও বাস্তবায়ন করেনি।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, দেশী মোবাইল ফোনের কলে সব ধরনের প্যাকেজে ন্যূনতম ১০ সেকেন্ড পালস রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বলেছে প্রতিটি দেশী অপারেটরকে এ আদেশ ১৫ আগস্ট থেকে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। ১৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কোন মোবাইল অপারেটর এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। বিটিআরসি বিষয়টি মনিটর করে যাচ্ছে। এখন বিটিআরসির আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্দেশ অমান্য করায় অপারেটরদের বিরাট অঙ্কের জরিমানা করতে পারে বিটিআরসি।
বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। সারাদিনে একজন গ্রাহক যদি গড়ে ৫টি কল করেন তাহলে দেখা যাবে তিনটি কলই ড্রপ করা হচ্ছে। ফলে ওই গ্রাহককে আবার নতুন করে কল করতে হচ্ছে। এতে তাকে নতুন কলের চার্জ দিতে হচ্ছে। নতুন কল তিনটির জন্য একজন গ্রাহককে কম করে হলেও ৬ টাকা গুণতে হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি অপারেটর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে মাতিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর গ্রাহকসেবার নামে নতুন নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই প্যাকেজগুলো হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রতিটি অফার গ্রহণ করতে গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হয়। প্রতিটি এসএমএসে ২ থেকে আড়াই টাকা কেটে নেয় অপারেটররা। টাকা কেটে নিলেও অনেক গ্রাহকের সেবা এ্যাক্টিভ হয় না। ফলে গ্রাহকের পকেট থেকে ওই টাকা চলে যায় আপারেটরের পকেটে। এভাবে ১০ কোটি গ্রাহকের মধ্য থেকে যদি ৩ থেকে ৪ কোটি গ্রাহক অফারগুলো গ্রহণ করেন তাহলে প্রতিদিন মোবাইল কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক গ্রাহক সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে অভ্যস্ত। এতে অতিরিক্ত সময়ের ফি নেয়া বাস্তবসম্মত নয়। অপারেটরদের এ ধরনের কাজ বন্ধ করতে ১০ সেকেন্ডের পালস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গ্রাহকসেবার নামে বিভিন্ন অফারের বিষয়ে আরেকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বিটিআরসি জানিয়েছে।