'নিরীক্ষা অস্বচ্ছ, অর্থ পরিশোধ নয়' -সিগভে ব্রেককে
 
বিটিআরসি নিরীক্ষার স্বচ্ছতায় 'সন্দেহ' প্রকাশ করে টেলিনরের এশিয়া-প্রধান বলেছেন, বিটিআরসির দাবি করা ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা তারা পরিশোধ করবেন না।

টেলিনরের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং গ্রামীণফোন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সিগভে ব্রেককে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপারেটরের (গ্রামীণফোন) সুষ্ঠু নিরীক্ষারও দাবি জানান রোববার ।

দুপুরে রুপসী বাংলা হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "বিটিআরসির নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।"

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে নিরীক্ষা করা হয়নি মন্তব্য করে ব্রিককে বলেন, "বিটিআরসির নিরীক্ষা প্রতিবেদন আমরা দেখতে চাই, এটি দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে।"
 
  দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের ৫৬ শতাংশ মালিকানা নরওয়েভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেলিনরের।

একটি নিরীক্ষার ভিত্তিতে শুল্ক ও রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ণ্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে গত ৩ অক্টোবর গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয় বিটিআরসি।

ওই চিঠিতে পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়।
পরদিন গ্রামীণফোন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে বিটিআরসির ওই নিরীক্ষা 'ভুল ধারণার ভিত্তিতে' হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গ্রামীণফোনকে পুনরায় চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। গ্রামীণফোনের একটি প্রতিনিধি দল গত ১০ অক্টোবর বিটিআরসি যায়।

তবে আলোচনায় বসার শর্ত হিসেবে পাওনা চেয়ে বিটিআরসির পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় গ্রামীণফোন। এরপর বিটিআরসি জানায়, এখন তারা আইনি পথে এগোবে।

এ পরিস্থিতিতে টেলিনরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন ফ্রেডারিক বাকসাস শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।
 
তবে সে সাক্ষাতে গ্রামীণফোনের পাওনা টাকা চেয়ে বিটিআরসির চিঠি বিষয়ে কী আলোচনা হয় তা জানা যায়নি।

'চাই গ্রহণযোগ্য সমাধান'

৩ অক্টোবরের চিঠিতে বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া ২১ দিনের মধ্যেই অর্থ পরিশোধ বিষয়ে 'একটি ফলপ্রসূ' আলোচনা হবে বলে আশাবাদী ব্রেককে।

ঠির পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ না করলে বিটিআরসি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।

তিনি বলেন, "আমরা আশা করছি ওই সময়ের আগেই অর্থ মন্ত্রনালয় বা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি ফলপ্রসু আলোচনা হবে। যে সমস্যা হয়েছে আমরা এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান চাই।"

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ ইতিমধ্যে বলেছেন, অর্থ পরিশোধ করা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ব্রেককে বলেন, আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিটিআরসি বিবেচনা করবে বলে তিনি আশা করেন।

ব্রেককে বলেন, "আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি, এখানকার সব ধরণের আইন, নিয়ম কানুন মেনেই আমরা ব্যবসা করতে চাই। আমরা চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।"

বিটিআরসির দাবির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে কি না সে বিষয়ে গ্রামীণফোন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপও বিবেচনা করা হবে।"

'ব্যবসা গোটানোর কোনো চিন্তা নেই'

এক প্রশ্নের জবাবে টেলিনরের এশিয়া-প্রধান বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে টেলিনর বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা ভাবনা নেই। এ কারণে গ্রামীণফোন দ্বিতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স নবায়েনের আবেদন করেছে।"

গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "ডাটা, থ্রি-জি প্রযুক্তি এবং স্থানীয় কনটেন্ট উন্নয়নে গ্রামীণফোন কাজ করে যাবে।"

"গ্রামীণফোন বিনিয়োগের ধারা অব্যহত রাখার জন্যই এসব কাজ করে যাবে।"

অপারেটরদের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিনরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন ফ্রেডারিক বাকসাসের সাক্ষাতে কী নিয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে ব্রেককে বলেন, "আমি সে সময় ছিলাম না, তবে নানা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।"
 
২জি লাইসেন্স নবায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে তারা থাকলেও পরে তা মেনে নেন।

রেগুলেটরি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে জানিয়ে ব্রেককে বলেন, "এসব ব্যাপারে আরো স্বচ্ছ হওয়া উচিৎ।"

বিটিআরসির নিরীক্ষার ভিত্তিতে পাওনা টাকা দাবি এবং ২জি লাইসেন্স ভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, "লাইসেন্স নবায়নে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।"

বাংলাদেশ আগামীতে তৃতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স দেবে। গ্রামীণফোন এ লাইসেন্স নিতে আগ্রহী কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে গ্রামীণফোন বাংলাদেশে ৩জি'র ব্যাপারে আগ্রহী।"

ব্রেককে বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে গ্রামীণফোন ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এক লাখ লোকের আইপিও রয়েছে। ১১টি দেশে তাদের ব্যবসা রয়েছে, সেখানে ৩১ হাজার কর্মী রয়েছে।

বাংলাদেশের বাজার খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে ব্রিককে বলেন, আমরা চাই এখানে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকুক যেখানে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন টেলিনর এশিয়ার কমিউনিকেশন ডিরেক্টর গিলেন ম্যানডেলিড, গ্রামীণফোনের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার কাজি মনিরুল কবির প্রমুখ।
  

- Copyright © 2013 telecom bd - Metrominimalist - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan | Distributed by Rocking Templates -