রবির
গ্রাহকসংখ্যার তথ্যে গরমিল চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকশেষে
(জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবির আয়ে প্রবৃদ্ধি
হয়েছে ১৮ শতাংশ। এ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি
প্রকাশিত রবির মূল প্রতিষ্ঠান আজিয়াটার তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন
থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে রবির গ্রাহকসংখ্যা সম্পর্কে আজিয়াটার
ওয়েবসাইটের তথ্য, আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ
নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।
আজিয়াটার
ওয়েবসাইটে রবির সর্বশেষ গ্রাহকসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ আর
বিটিআরসির ওয়েবসাইটে তৃতীয় প্রান্তিকশেষে বা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রবির
মোট গ্রাহক দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৭৩ হাজার। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী
অক্টোবরশেষে রবির গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৫৫ হাজার। এদিকে আজিয়াটার
ওয়েবসাইট ও তাদের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনেও গ্রাহকসংখ্যার
তথ্যে ব্যাপক গরমিল লক্ষ করা যায়। আজিয়াটার তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে
রবির মোট গ্রাহক দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৩৩ হাজার। অর্থাৎ
সেপ্টেম্বরশেষে বিটিআরসি ও আজিয়াটার আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো রবির
গ্রাহকসংখ্যার পার্থক্য ৬১ লাখ ৬০ হাজার। আবার আজিয়াটার ওয়েবসাইট ও
আজিয়াটার আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো রবির গ্রাহকসংখ্যার পার্থক্য ৫৮ লাখ ৩৩
হাজার। প্রশ্ন হচ্ছে, রবির গ্রাহকসংখ্যা আসলে কত?
তবে রবির নির্বাহী
ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আজিয়াটার
প্রতিবেদনে বিক্রি হওয়া মোট সিমের সংখ্যা দেখানো হয়েছে। আর ওয়েবসাইটে
গ্রাহকসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির
চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বলেন, দেশের মোবাইল ফোন
অপারেটরদের মধ্যে তথ্য লুকানোর প্রবণতা আছে। সুযোগ পেলেই তারা এটা করে। এ
ধরনের ঘটনা নজরে এলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে এবং
সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গ্রাহক সংখ্যার
তথ্য নিয়ে দেশের অন্য কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের তথ্য ও বিটিআরসির তথ্যের
মধ্যে বড় ধরনের গরমিলের অভিযোগ এখনো ওঠেনি।
আজিয়াটার প্রতিবেদনে, গত
বছরের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে এ বছরের একই সময় পর্যন্ত রবির গ্রাহক বেড়েছে ৩৭
শতাংশ। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় প্রান্তিকশেষে রবির গ্রাহক ছিল ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৩ হাজার। আর তৃতীয়
প্রান্তিকশেষে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৩৩
হাজার।
আজিয়াটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের
তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রবির আয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এদিকে গত বছরের তৃতীয়
প্রান্তিক থেকে এ বছরের একই সময় পর্যন্ত এ হার ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আর চলতি
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ হার বেড়েছে ৩ শতাংশ।
তৃতীয়
প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রবির সুদ, কর, অবচয় ও
অবলোপন-পূর্ববর্তী মুনাফা (ইবিআইটিডিএ) ১৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের তৃতীয়
প্রান্তিক থেকে এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ৫ শতাংশ বেড়েছে
প্রতিষ্ঠানটির ইবিআইটিডিএ। আর ২০১০ সালের তুলনায় এ হার ৫ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ হার বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
তবে
প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কর-পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) গত বছরের তৃতীয়
প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে কমেছে ৪ শতাংশ। এ বছরের
সেপ্টেম্বরে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর উন্নয়নকালে
পুরনো যন্ত্রপাতির বদলানোয় বর্ধিত অবলোপন এবং ডলারের বিপরীতে টাকার
অবমূল্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানটির পিএটি কমেছে বলে জানা গেছে।
মাহমুদুর
রহমান জানান, আয়ের প্রবৃদ্ধিতে রবি আনন্দিত। তবে এটি আরও বাড়ানোর প্রত্যাশা
করা হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে পিএটি কমেছে। এ
অবমূল্যায়নের ব্যাপারে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
তৃতীয় প্রান্তিকে
প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের গড় ফোন কল বেড়েছে। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রবির
গ্রাহকরা গড়ে ১৪৮ মিনিট করে কল করেন আর চলতি বছরের একই সময়ে তা দাঁড়িয়েছে
১৬৩ মিনিট। তৃতীয় প্রান্তিকশেষে রবির গ্রাহকপ্রতি আয় (এআরপিইউ) কমেছে। গত
বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির এআরপিইউ ছিল ১৯৫ টাকা। এ বছরের তৃতীয়
প্রান্তিকশেষে তাদের এআরপিইউ দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকা।
২০১০ সালে একটেলের
সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে আজিয়াটা। এ
ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় জাপানের এনটিটি ডোকোমো। রবি নামে
রি-ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নতুন করে যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি।
রি-ব্র্যান্ডিংয়ের পর গ্রাহক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে দেশের অন্যতম মোবাইল ফোন
অপারেটরে পরিণত হয়েছে রবি। গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ছয়টি মোবাইল ফোন
অপারেটরের মধ্যে রবির অবস্থান তৃতীয়।
২০১১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে
আজিয়াটার আয় ৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ইবিআইটিডিএ কমেছে দশমিক ২
শতাংশ। আর পিএটি ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে আজিয়াটার। প্রতিষ্ঠানটির মূলধনী
ব্যয় বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, এশিয়ার ১০টি দেশে
তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসা রয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক
প্রতিষ্ঠান আজিয়াটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া,
কম্বোডিয়া ও শ্রীলংকায় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। আর ভারত ও
ইরানে টেলিযোগাযোগ খাতে আজিয়াটার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আছে। অঙ্গ ও সহযোগী
প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে তাদের ১৮ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে।