- Back to Home »
- Spotlight »
- টু জি’র স্পেকট্রাম ফি’র টাকা পরিশোধে আরো দুই মাস সময় চায় সিটিসেল
(প্রিয় টেক) পল্লবীতে চাঞ্চল্যকর 'পাকিস্তানি মোহাম্মদ আলী' হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে জীবন আহমেদ জনি ও কালাম নামে দু'জনকে ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ হত্যাকাণ্ডে মূল ভূমিকা পালন করে মিরপুরের সন্ত্রাসী মুসা। কিন্তু মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে অনেক চেষ্টা করেও তার অবস্থান জানতে পারেনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কারণ তার ব্যবহৃত সিমকার্ডটি নিবন্ধনের তথ্য ছিল ভুয়া। অন্য ঘটনায় লন্ডনে হেরোইন পাচারের অভিযোগে ২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে শামসুল আরেফিন তুহিনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তার কাছে পাওয়া ২৩টি সিমকার্ডের একটিও সঠিক তথ্য দিয়ে কেনা হয়নি। শুধু এই দুটি ঘটনা নয়; প্রতিদিনই এ রকম অনেক ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। ফলে অপরাধী শনাক্ত, গ্রেফতার বা রহস্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়ছেন তারা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ছয় মাসে প্রায় ৬৫ হাজার সিম শনাক্ত করা গেছে, যেগুলোর নিবন্ধনের তথ্য ভুয়া। এ কারণে নতুন করে সিম নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, অপরাধীদের ৯০ ভাগেরও বেশি ভুয়া নিবন্ধনের সিমকার্ড ও ভুয়া আইএমইআই নম্বরের মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করছে। গত পাঁচ-ছয় মাসে বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে নেমে প্রায় তিন হাজার ভুয়া সিমকার্ড পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯৫টি সিমকার্ড সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফোনে চাঁদা দাবি, হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন অপরাধে এসব সিম ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রতি অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহারের অভিযোগে ১৫ হাজার ২৫৪টি নিবন্ধনহীন সিম জব্দ করে বিটিআরসি ও র্যাব। এ জন্য ছয় অপারেটরকে মোট ছয় কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ১৪ আগস্ট এ সংশ্লিষ্ট চিঠি অপারেটরদের কাছে পাঠানো হয়।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত ছয় মাসে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রচুরসংখ্যক মোবাইল ফোন সিম সম্পর্কে অভিযোগ দেয়। এগুলো যাচাই করে দেখা যায়, প্রায় ৬৫ হাজার সিমের প্রকৃত ব্যবহারকারীর সঙ্গে নিবন্ধনের তথ্যের কোনো মিলই নেই।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভুয়া নিবন্ধনের সিমের পাশাপাশি আরেকটি বড় সমস্যা হলো ভুয়া আইএমইআই নম্বরের ফোন সেট। প্রতিটি ফোন সেটের জন্য একটি ১৫ অঙ্কের ইউনিক আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর থাকে। এই নম্বরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সেটটিকে শনাক্ত এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা যায়। অপরাধীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দারা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে এ প্রযুক্তি খুবই কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিষয়টি জানার পর থেকে প্রযুক্তির সুবিধা নিতে শুরু করেছে অপরাধীরাও। তারা বেছে বেছে ভুয়া আইএমইআই নম্বরের সেট ব্যবহার করছে অপরাধ সংঘটন ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের কাজে। এ কারণে অপরাধী শনাক্ত করতে গিয়ে পুলিশ-র্যাবকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮৮ হাজার মোবাইল ফোন সেটের একটি চালান আটক করে বিটিআরসি। এর বেশিরভাগই ছিল ভুয়া আইএমইআই নম্বরের। এগুলোর কোনো একটি সেটের আইএমইআই নম্বরের বিপরীতে ছিল প্রচুর সংখ্যক সেট। আবার কোনো সেটের আইএমইআই নম্বর সঠিক ছিল না। এর আগে ডিবি একজন শীর্ষ অপরাধীকে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করতে গিয়ে মহাবিপাকে পড়ে। কারণ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরে পাওয়া গেছে ১৯৮টি সেট।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সভাপতি ফয়সাল আলীম বলেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিএবিটি প্রতিটি মোবাইল ফোন সেটের জন্য একটি ইউনিক নম্বর বরাদ্দ করে। আমদানির পর বিটিআরসির ই-মেইলে যোগাযোগ করে সেটগুলোর নম্বর সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী অবৈধ পথে ভুয়া আইএমইআই নম্বরের মোবাইল ফোন সেট আমদানি করে। এগুলো বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হতে পারে।
সূত্র জানায়, মূলত চীনে স্থানীয়ভাবে তৈরি সস্তা সেটগুলোয় ভুয়া আইএমইআই নম্বর বেশি ব্যবহার করা হয়। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য বিএবিটি থেকে অল্প কিছু সেটের নিবন্ধন (আইএমইআই) নিয়ে সেই নম্বরগুলোর একেকটি প্রচুর সেটে বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে একই আইএমইআই নম্বরের বিপরীতে অসংখ্য সেট হয়ে যেতে পারে।
সৌজন্যে: ইন্দ্রজিৎ সরকার, সমকাল