- Back to Home »
- Spotlight »
- মোবাইলে অপরাধ বৃদ্ধিতে পুলিশের অনুরোধে প্রিঅ্যাক্টিভেটেড সিম বিক্রি বন্ধ হতে যাচ্ছে
(প্রিয় টেক) মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধ
নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেক দিন থেকেই নানা কৌশল খুঁজছে পুলিশসহ আইন শৃংখলা
বাহিনী। নিবন্ধনহীন মোবাইল সিমের মাধ্যমে করা অপরাধ দমনে এবার নতুন কৌশল
নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের অনুরোধে তথ্য পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিক্রিত
সিম অ্যাকটিভ না করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিটিআরসি।
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে বিক্রি হওয়া কোনো সিমেই আর প্রিঅ্যাক্টিভেশন
থাকবে না। ফলে সিম কিনেই কথা বরার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। এর আগে সিদ্ধান্ত হলেও
গত ২৭ সেপ্টেম্বর মোবাইল অপারেটদের এক চিঠিতে বিটিআরসি আবারো জানিয়েছে,
সঠিক তথ্য প্রমাণ-ছবিসহ কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরে সেটি অপারেটর যাচাই
বাছাইয়ে ক্রেতার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলেই কেবল বিক্রিত সিমটি ব্যবহার
উপযোগী (অ্যাক্টিভ) হবে।
বিটিআরসি’র বক্তব্য সম্পর্কে একই কথা বলেছেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, নিবন্ধনহীন সিমের কারণে পুলিশকে বিভিন্ন অপারাধের তদন্ত করতে গিয়ে বিশেষ করে টেলিফোনে চাঁদাবাজির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়তে হয়। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে সিমে নিবন্ধনের তথ্য চাইলে তারা বলেন, রিটেলাররা এখনও সংশ্লিষ্ট সিম কার্ডটির রেজিষ্ট্রেশন ফরম ঢাকাতে পাঠাননি। ফলে সিম নিবন্ধনের তথ্য দিতে পারে না তারা। এতে করে পুলিশ অনেক সময় অপরাধীকে সনাক্ত করতে পারে না। আর যেসব রেজিষ্ট্রেশনের তথ্য দেয় তাও একেবারেই ভুয়া। এমন সব নাম ঠিকানা ব্যবহার করা যেখানে এই নামে কোন ব্যক্তি বা ঠিকানাই নেই। ফলে বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে বিটিআরসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, অপরাধ দমন করতে সঠিক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই। সঙ্গে এখন নতুন সংযুক্ত হতে যাওয়া সিমের পরিচয় নিশ্চিত করা হচ্ছে। অল্প দিনের মধ্যে তারা ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে যাওয়া সিমের পুনঃনিবন্ধন চালু করবেন বলেও জানান তিনি।
তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এমন কড়াকড়ির ফলে তাদের সিম বিক্রি সন্দেহাতীতভাবে কমবে। এমনকি সিম বিক্রি শূন্যে চলে আসতে পারে বলেও আশংকা করেছেন তারা। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও আশংকা প্রকাশ করেছেন তারা।
অন্যতম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান বলেন, যে পদ্ধতিতে সিম বিক্রি করার কথা বলা হচ্ছে তাতে একজন গ্রাহককে সিম কিনেও কথা বলার জন্যে অন্তত তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। এতে নতুন গ্রাহক অবশ্যই কমবে। তারা বিবেচনায় অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে হয়তো এটি প্রভাব ফেলবে কিন্তু তার নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহও রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে নিবন্ধনের কড়াকড়ি ইত্যাদি থাকার পরেও অপরাধ থেমে নেই।
অপর এক মোবাইল ফোন কর্মকর্তা বলেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ছাড়া সিম বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহক পরিচয়পত্রের যে ফটোকপি দেবে সেটি যে ভূয়া নয়, তা প্রমাণ হবে কিভাবে? আবার এই দায় দায়িত্ব পুরোটাই অপারেটরদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের মোবাইল ফোনের তথ্য খুঁজতে গিয়ে "আটা", "সুজি", "মুন্না ভাই এমবিবিএস" ইত্যাদি ধরনের অসংখ্য ভূয়া নামের সিম রেজিষ্ট্রেশন পেয়েছেন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যা কিনা অপরাধীদের জন্য অভয়ারন্য, সেখানে তাদেরকে সুবিধা দিতে কোনও রকম পরিচয় নিশ্চিত না করেই যথেচ্ছা সিম কার্ড বিক্রি একটি বিশাল সমস্যার তৈরী করেছে।
বন্ধ সিম পুনরায় চালু করা যাবে না
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন সিম রেজিষ্ট্রেশনের পাশাপাশি বন্ধ সিমকে পুনরায় চালু করার পদ্ধতিটিও বাতিল করতে হবে। কারণ, এতে করে পুরনো অন্য কারো নামে নেয়া সিম কার্ডটি নতুন করে অ্যাক্টিভেট করে নিয়ে অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নিরাপত্তার কারণে বন্ধ সিম নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর ব্যবহার না করলে সেটাকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। গ্রাহককে সেক্ষেত্রে নতুন সিম নাম্বার নিতে হয়। বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটররা এই নিয়মগুলো মানে না। তারা পুরো দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করেছে।
গ্রাহকের ডাটাবেজ তৈরী করতে হবে
বাংলাদেশে বলা হয় ৯ কোটির উপর সিম কার্ড বিক্রি হয়েছে। কিন্তু কারো কাছেই এই গ্রাহকের কোনও ডাটাবেজ নেই। অপারেটরের কাছে যেমন নেই, বিটিআরসি'র কাছেও নেই। এতো বিশাল একটি শিল্প, এভাবে যগা-খিচুরিভাবে চলতে পারার উদাহরণ বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
Post a Comment