- Back to Home »
- Spotlight , teletalk »
- সাড়া নেই টেলিটক থ্রিজিতে
দেশে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ফোন চালু হলে যতটা সাড়া পড়বে বলে আশা করা হয়েছিল তা হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার মোবাইল অপারেটর টেলিটক বিক্রির জন্য এক লাখ সিম বাজারে ছাড়লেও দুই সপ্তাহেরও বেশি সময়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার। আবার থ্রিজি সেবা ব্যবহার হচ্ছে এমন সিমের সংখ্যা আরও কম। বর্তমানে থ্রিজি নেটওয়ার্কে কত সিম চালু রয়েছে সেটি বলতে রাজি হননি টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এ সময়ে তাদের প্রত্যাশা অনুসারে সব কিছু হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ অক্টোবর টেলিটকের থ্রিজি সেবার 'পরীক্ষামূলক' বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকেই সিম বিক্রি শুরু করেছে অপারেটরটি। এর আগে ২০০৫ সালে টেলিটকের যাত্রার সময় যেভাবে একটি সিমের জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন এবারও নতুন প্রযুক্তির সুবিধা নিতে তেমনটা হবে বলে ধারণা করেছিলেন অনেকে। তবে গ্রাহকদের আগ্রহ না থাকায় বদলে গেছে সব হিসাব আর পরিকল্পনা।
বাঁধ ভেঙ্গে দাও স্লোগান নিয়ে বাজারে নামলেও সেই বাঁধ আর ভাঙ্গা যাচ্ছে না।
দেশে মোবাইল ফোন সেবার নতুন এ প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ গ্রাহকদের খুব বেশি তথ্য জানা না থাকার বিষয়টি থ্রিজির কাটতিতে বড় ধরনের প্রভাব রেখেছে বলে অনেকে মনে করছেন। একই সঙ্গে এ জন্য কিছুটা ব্যয়বহুল মোবাইলসেটের ব্যবহার প্রয়োজন হওয়ায় আগ্রহ থাকলেও অনেক গ্রাহক এ সেবা নিচ্ছেন না।
রাজধানীতে টেলিটকের বেশ কয়েকটি গ্রাহক সেবা (কাস্টমার কেয়ার) কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, একেকটি কেন্দ্রে থ্রিজি সিম বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই থেকে তিনশ' করে। মঙ্গলবার পল্টন কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত তিনশ' সিম বিক্রি করেছেন তারা। ঢাকার নয়টি কেন্দ্রে সব মিলে বিক্রি হওয়া সিমের সংখ্য তিন হাজারের বেশি হবে না বলে নিশ্চিত করেন কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলেন, প্রচারণার অভাব এবং ঈদের তিন দিন আগে নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত ঝামেলায় তাদের সব পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে। এখন নেটওয়ার্ক জটিলতায় অকেজো হয়ে পড়া দশ হাজার সিম বদলে দেওয়া নিয়ে তারা অনেক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। যে কারণে থ্রিজি বিষয়ে খুব একটা মনোযোগও দিতে পারছেন না।
সাড়া না মেলার কারণ হিসেবে গ্রাহকদের মধ্যে থ্রিজি সংক্রান্ত বিভ্রান্তি রয়েছে বলেও মনে করছে টেলিটক। মুজিবুর রহমান বলেন, মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া থাকলেও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না এ প্রযুক্তির ব্যবহারের দিকগুলো। তাছাড়া সিম কিনলেও থ্রিজি ব্যবহার উপযোগী মোবাইলসেট কিনতে গিয়ে ভুল করেছেন কেউ কেউ। ফলে থ্রিজির সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। এতে গ্রাহক ভোগান্তিও বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সমস্যা সমাধানে ও এ বিষয়ে তথ্য জানাতে রোববার থেকে টেলিটকের প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। এ জন্য বিশেষভাবে কিছু কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কন্ট্রোল রুমের বেশ কয়েকটি নম্বরে গ্রাহকরা ফোন করে থ্রিজি বিষয়ে তাদের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর সার্বক্ষণিকভাবে জেনে নিতে পারবেন। এ সেবার ব্যবহারবিধি ও কার্যকারিতা সম্পর্কেও জানতে পারবেন গ্রাহকরা বলে তিনি জানান।
মুজিবুর রহমান বলেন, এর আগে টেলিটকের ওয়েবসাইটে থ্রিজি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলেও এতে হিট খুবই কম। এ সম্পর্কে গ্রাহকদের স্বচ্ছ ধারণা দিতে টেলিভিশনে বিষয়কভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচার এক সপ্তাহে শুরু হবে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনে রোড শো করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
মুজিবুর রহমান দাবি করেন, এতদিন শুধু সিম বিক্রি করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ডঙ্গল বিক্রি শুরু হলে অবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন ঘটবে। ইন্টারনেট ডঙ্গলের মূল্য নির্ধারণের পর আগামী সপ্তাহে এর বিক্রি শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে থ্রিজিতে কথা বলতে পছন্দ না করলেও উচ্চ গতির জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আগ্রহী হবে। তখন সিম বিক্রি হু হু করে বাড়বে বলে তার ধারণা।
থ্রিজিতে রাজধানীর অধিকাংশ জায়গায় নেটওয়ার্ক না পাওয়া বিষয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের জবাবে টেলিটক এমডি বলেন, নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য আরও জোরেশোরে কাজ করছেন। নেটওয়ার্ক আপ-ডাউন করার অভিযোগও মেনে নিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান।
টেলিটক থ্রিজি সেবা দেওয়া শুরু করলেও অন্যান্য বেসরকারি অপারেটরের জন্য সেবাটি এখনও উন্মুক্ত করা হয়নি। এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। জানুয়ারিতে উন্মুক্ত নিলামে একাধিক অপারেটরকে লাইসেন্স দেওয়ার পর তারাও থ্রিজি সেবা শুরু করতে পারবে।
সৌজন্যে: সজল জাহিদ, দৈনিক সমকাল
Post a Comment