অযাচিতভাবে মোবাইল ফোন গ্রাহককে ওয়েলকাম টিউন, গান বা অন্যান্য ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনও কখনও একটি অফার ফ্রি দিয়ে দুই সপ্তাহ পর কিছু না জানিয়ে সেবাটি গ্রাহকদের জন্য চালু করে দেওয়ার ঘটনা খুবই নিয়মিত। সবচেয়ে মুশকিলের কথা হলো, একবার একটি সেবা গছাতে পারলে সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসার সুযোগই পাচ্ছেন না গ্রাহক। নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি এটিকে বলছে মোবাইলের পুশ সেল। এ পুশ সেলের মাধ্যমে মাসে গ্রাহকদের অন্তত দেড় থেকে দুইশ' কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবি বিটিআরসির।

আবার পুশ সেল বিষয়ে নানা নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেগুলো অনেক অপারেটর আমলে নেয়নি বলে জানা গেছে। তারা বলছে, গ্রাহকদের সঙ্গে এমন প্রতারণা সহ্য করা হবে না। সেক্ষেত্রে প্রথম দফায় অপারেটর ধরে ধরে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। এরপর জরিমানাও করা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন করতে নানা প্রচারসহ ফেসবুকে অভিযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, একবার না বুঝে রাশিফল জানার চেষ্টা করে তিনি এমন বিপদে পড়েছেন যে, সেখান থেকে আর বেরোতেই পারেননি। আড়াই বছর ধরে প্রতিদিন সকালে তার আড়াই টাকা করে কাটা যাচ্ছে। দফায় দফায় অভিযোগ করেও সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ইন্দিরা রোডের নিশি হঠাৎ করেই তার মোবাইল ফোনে চার ডিজিটের একটি নম্বর থেকে ফোন পান। ওপ্রান্ত থেকে নিশিকে গান ডাউনলোড করার অনুরোধ জানানো হয়। পরপর তিনদিন ফোন করার পর একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে নিশি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন; কিন্তু তাতেও দমে যান না তারা। সময়ে-অসময়ে ফোন আসতেই থাকে। মাঝে মাঝে এসএমএসও আসে। এ বিষয়ে বিটিআরসি বলছে, বিশ্বের কোথাও এভাবে গ্রাহককে বিরক্ত করে কোনো পণ্য বিক্রি করার রেওয়াজ নেই।
বাগেরহাটের এডওয়ার্ড রনি মিরধা একটি মোবাইল সেট জিততে এক মাসে ১০ হাজার টাকার এসএমএস করেছেন। পুরস্কার পাওয়া হয়নি তার। এমনকি তিনি জানতেও পারেননি প্রতিযোগিতায় তার অবস্থান কততম। প্রথম যে ১০ জন পুরস্কার জিতেছেন তারাই বা কত এসএমএস করে জিতলেন মোবাইল সেটগুলো, সেটিও জানতে পারেননি তিনি। ক্ষুব্ধ রনি শেষ পর্যন্ত বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করেছেন।
বিটিআরসি বলছে, পুশ সেলের মাধ্যমে অপারেটরগুলো গ্রাহককে বিভিন্ন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস কিনতে বাধ্য করে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে তারা গ্রাহককে এটি কিনতে বাধ্য করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে সময়ে-অসময়ে ফোন করে বা এসএমএস পাঠিয়েও গ্রাহককে বিরক্ত করে। এ বিষয়ে তাদের কাছে অনেক অভিযোগও এসেছে।
এসব বিষয়ে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিশন অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের নিরাপত্তার ছাতা হিসেবে কাজ করে। কয়েকটি অপারেটর তো বেশি কথা বলার বিনিময়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট উপহার দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এভাবে মাত্র কয়েকটি হ্যান্ডসেট উপহার হিসেবে দিয়ে হাজার হাজার লোককে অত্যধিক কথা বলতে উৎসাহী করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অপারেটররা এখন সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ঠকাচ্ছে ব্যান্ডউইথ বিক্রির মাধ্যমে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আশফিয়া করিম জানান, ৩২০ টাকা দিয়ে এক গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ কেনার পর সামান্য কিছু কাজ করেছেন তিনি। পরে দেখেন আর কোনো টাকাই অবশিষ্ট নেই। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা জানিয়েছেন, এক মাসের বান্ডেল কোনো গ্রাহক নিলে এরপর তার আর কোনো ব্যান্ডউইথ থাকারও কথা নয়। তবে বিটিআরসি বলছে, মোবাইল ফোনের অব্যবহৃত টাকা যদি থেকে যেতে পারে তাহলে অবশ্যই ব্যান্ডউইথের টাকাও থাকতে হবে। এটি কেটে নেওয়া যাবে না।
একইভাবে কৌতুক শোনা, মোবাইলে নতুন গান শোনা ও সুন্দর ওয়ালপেপার দেখানোর জন্য হরহামেশাই মোটা টাকা কেটে নিচ্ছে অপারেটররা। এক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, একটি অপারেটর কারিনা-সাইফের হট ভিডিও দেখানোর এসএমএস পাঠাচ্ছে। গ্রাহক বুঝে না বুঝে ইয়েসে ক্লিক করলেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে গ্রাহক ঠকানো বন্ধ করতে বিটিআরসি ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সৌজন্যে: সমকাল

- Copyright © 2013 telecom bd - Metrominimalist - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan | Distributed by Rocking Templates -