বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে মোবাইলফোন ও ওয়াইম্যাক্স গ্রাহকদের অনলাইনে রিচার্জ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। অনুমোদন না থাকায় ২ সেপ্টেম্বর সেবাটি বন্ধ করে দেয় কমিশন।
অনলাইনে রিচার্জের সুযোগ চালু হওয়ার পর দেশ-বিদেশে এ জাতীয় অনেক সাইট চালু হয়। দেশের বাইরে যেসব সাইট অনলাইন রিচার্জের সুবিধা দিচ্ছে তাদের মাধ্যমে হুন্ডির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে বিটিআরসি। অপারেটররা যেহেতু এ সেবার মাধ্যমে সুবিধা পেয়ে থাকে, তাই তাদের এর কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। দেশের ছয় মোবাইলফোন অপারেটর এবং ওয়াইম্যাক্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন ও কিউবিকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেবাটির জন্য অপারেটরদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিটিসেল, কিউবিবাংলালায়ন অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। তবে কমিশনের এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের শীর্ষ দুই মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি।
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইলফোন অপারেটর বাংলালিংকের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ পরিচালক (গভ. রিলেশন, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড লিগ্যাল) জাকিউল ইসলাম বলেন, এটি সরাসরি অপারেটরদের দেয়া কোনো সেবা নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী সেবাটি বন্ধ করা হয়েছে। বিটিআরসি এ সেবা চালু করতে অনুমোদন নিতে বলেছে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
টেলিযোগাযোগ আইনের ৪০-এর ১ ধারা প্রয়োগ করে বিটিআরসি সেবাটি বন্ধ করেছে। এ ধারায় বলা আছে, ‘কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো অপারেটর তার লাইসেন্সকৃত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বা সেবা প্রদানের কোনো স্থাপনা, যন্ত্রপাতি বা সুবিধা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বা ফিস বা অন্য কোনো ধরনের মূল্য বা সুবিধার বিনিময়ে অন্য কোনো ব্যক্তিকে ব্যবহারের অনুমতি বা সুযোগ দিতে পারবে না।’
ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভাস) প্রোভাইডাররা সেবাটি দিয়ে আসছিল। ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে অনলাইন প্রসেসর হিসেবে কাজ করত। এ জন্য ব্যাংক ও কনটেন্ট প্রোভাইডারদের মধ্যে চুক্তি হয়। এ ধরনের কয়েকটি সাইট হলো— ইজি ডটকম ডট বিডি, আমারবিল ডটকম, পেপয়েন্ট ডটকম ডট বিডি। অনলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকরা সহজেই তাদের প্রি-পেইড নম্বর রিচার্জ বা পোস্টপেইড নম্বরের বিল পরিশোধের সুযোগ পেতেন। ক্রেডিট কার্ড যেমন ভিসা, মাস্টার কার্ড এবং ডেবিট কার্ড যেমন ডিবিবিএল নেক্সাস, ব্র্যাক ব্যাংক এটিএম ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্টের সুযোগ ছিল। প্রায় সব মোবাইলফোন অপারেটরের জন্য অনলাইন রিচার্জ সুবিধা চালু ছিল। মোবাইলফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনৈতিক সেবা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোই সেবাটি দিয়ে আসছিল। গ্রাহকদের কাছ থেকে এ জন্য ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৬ শতাংশ হারে কমিশন নেয়া হতো।
অনলাইন রিচার্জ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক নিয়মিত সেবাটি গ্রহণ করতেন। কিউবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের ৪০ শতাংশ গ্রাহকই অনলাইনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে থাকেন। এ ব্যবস্থায় প্রি-পেইড মোবাইলফোন গ্রাহকদের জন্য ৫০-২০০০ টাকা এবং পোস্টপেইড গ্রাহকদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা বিল পরিশোধের সুযোগ ছিল।
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এসএসএলের মহাব্যবস্থাপক আনিসুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সে নতুন একটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। সেই সময় এ ধরনের জনপ্রিয় প্রিমিয়াম সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনলাইনের বিভিন্ন সার্ভিস থেকে আস্থা উঠে যেতে পারে। এ কারণেই দ্রুত সেবাটি পুনরায় চালুর অনুমতি দেয়া প্রয়োজন।
অনলাইন রিচার্জ সেবা পুনরায় চালুর অনুমোদন দেয়া হবে কি না— জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিশনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সৌজন্যেঃ জেসমিন মলি, বণিক বার্তা

- Copyright © 2013 telecom bd - Metrominimalist - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan | Distributed by Rocking Templates -