আগের স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি টাকা দাবি

গ্রামীণফোনের মতো বাংলালিংকও ২০০৮ সালে তাদের বরাদ্দ দেওয়া স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা কেন দিতে হবে, এর ব্যাখ্যা চেয়ে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে। গ্রামীণফোন গত মঙ্গলবার এ ধরনের চিঠি দেয়। গ্রামীণফোনকে আগের ওই স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি ৩৮৪ কোটি টাকা দিতে হবে বলে বিটিআরসি জানিয়ে দিয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, এ দুই মোবাইল ফোন অপারেটরের চিঠি তাঁরা পেয়েছেন এবং বাড়তি ওই টাকার দাবি সম্পর্কে বিটিআরসির ব্যাখ্যা বৃহস্পতিবার (আজ) জানিয়ে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র জানায়, বাংলালিংক এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা ছাড়াও লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার জন্য আরো সময় চায়। কিন্তু তা দিতে হলে সেই বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এককভাবে বিটিআরসির এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। ২০০৮ সালে বরাদ্দ নেওয়া স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি টাকার বিষয়ে ছাড় দেওয়ার ক্ষমতাও বিটিআরসির নেই। কারণ বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট নীতিমালাটি সংশোধনের এখতিয়ার রাখে না। নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার আগে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতবিনিময় হয়েছে। তখন তারা বিষয়টি নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি। নীতিমালার ৯ অনুচ্ছেদে আগের ওই স্পেকট্রামের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখন এ বিষয়ে এ দুই মোবাইল ফোন অপারেটরকে ছাড় দিতে হলে নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিটিআরসি গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেলকে তাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে স্পেকট্রাম চার্জসহ অন্যান্য ফিয়ের প্রথম কিস্তির ৪৯ শতাংশ টাকা জমা দিতে চিঠি দেয়। চিঠিতে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংককে তাদের ২০০৮ সালে বরাদ্দ পাওয়া স্পেকট্রামের জন্য মার্কেট কম্পিটিশন ফ্যাক্টর (এমসিএফ) অনুযায়ী বাড়তি ৪৩১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।


লাইসেন্স নবায়ন নীতিমালায় গ্রামীণফোনের ১.৪৮ শতাংশ, বাংলালিংকের ১.০৬ শতাংশ, রবির ০.৯৯ শতাংশ এবং সিটিসেলের ০.৩৩ শতাংশ এমসিএফ ধার্য করা হয়েছে। সে অনুসারে বিটিআরসির দাবি নীতিসম্মত হলে গ্রামীণফোনের আগের ৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য বাড়তি ৩৮৪ কোটি টাকা এবং বাংলালিংককে ২ দশমিক ৬ মেগাহার্টজের জন্য বাড়তি ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিতে হতে পারে। রবিরও ২০০৮ সালে বরাদ্দ পাওয়া দুই মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম রয়েছে। কিন্তু তাদের এমসিএফ কম হওয়ার কারণে বাড়তি কোনো টাকা দিতে হবে না। আগের ওই স্পেকট্রাম ছাড়াও আগামী ১৫ বছরের জন্য নতুন করে স্পেকট্রাম বরাদ্দ নিতে গ্রামীণফোনকে ১৪ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য তিন হাজার ২৪১ কোটি দুই লাখ টাকা, বাংলালিংককে ১২ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য এক হাজার ৯৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, রবিকে তাদের ১২ দশমিক ৮ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য এক হাজার ৯০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সিটিসেলকে তাদের ব্যবহারযোগ্য ৮০০ ব্যান্ডের ১০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা দিতে হবে।
গ্রামীণফোন বিটিআরসির ওই চিঠি পাওয়ার পর সোমবার রাত ৯টায় এক বিবৃতিতে জানায়, ২০০৮ সালে তারা যখন ১৮০০ ব্যান্ডের ৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ বরাদ্দ নেয়, তখন লিখিতভাবে তাদের এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে এর জন্য ভবিষ্যতে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না। কিন্তু বিটিআরসি যে চিঠি দিয়েছে, তাতে ওই স্পেকট্রামের জন্য এমসিএফ অনুসারে অতিরিক্ত প্রায় ৩৮৪ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, লাইসেন্স নবায়নের সিদ্ধান্তের আগেই ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া ভ্যাট সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার আগেই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। গ্রামীণফোন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত মঙ্গলবার বিটিআরসিকে চিঠি দেয়।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ এ দাবি ছাড়াও লাইসেন্স নবায়নের জন্য গ্রামীণফোনকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি এবং বাংলালিংককে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি বিটিআরসি গত ১৫ বছরের সুদে আসলে প্রাপ্য হিসেবে গ্রামীণফোনকে বকেয়া রাজস্ব তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা পরিশোধের নোটিশ দেয়। গ্রামীণফোন ওই নোটিশ অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

- Copyright © 2013 telecom bd - Metrominimalist - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan | Distributed by Rocking Templates -