মিসরের ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিংয়ের গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (জিসিইও) আহমেদ আবু দোমা বলেছেন, বাংলাদেশ প্রচুর সম্ভাবনার দেশ। হায়দরাবাদের মতো বাংলাদেশে ওরাসকম প্রথম স্মার্ট ভিলেজ করতে আগ্রহী। যাতে এক জায়গায় আইটি বা টেলিকম প্রযুক্তির সব সেবা পাওয়া যায়। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশে আইবিএমের মতো বড় বড় কোম্পানি থাকবে। তিনি বলেন, মিসরে ওরাসকম স্মার্ট ভিলেজ করেছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে আমরা আগ্রহী। বাংলাদেশে ওরাসকম দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করছে। আমরা বাংলাদেশের বাঘ (টাইগার) হিসেবে পরিচিত এবং টাইগার হিসেবে থাকতে চাই। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের (জিপি) কাছে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব পাওয়ার চিঠি দিয়েছে বলে জেনেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুর ব্যাপারে আমরা খবর পাচ্ছি। এতে করে হয়তো গ্রামীণফোন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দ্বিতীয় বৃহত্ মোবাইল অপারেটর হিসেবে বাংলালিংক সাময়িকভাবে লাভবান হবে। আমরা হয়তো বেশি গ্রাহক পাব। কিন্তু আমি বলতে চাই, সার্বিকভাবে এ ধরনের কাজ টেলিকম শিল্পকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ এ প্রক্রিয়ায় কোনো অপারেটরের অডিট হতে পারে না। মোবাইল অপারেটররা বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের স্বত্বাধিকারী ওরাসকম টেলিকমের প্রধান নির্বাহী আহমেদ আবু দোমা গত ১৯ অক্টোবর কায়রোতে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে টেলিকম খাতের বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন। আবু দোমা তিন বছর বাংলালিংকের সিইও’র দায়িত্ব পালন করে সম্প্রতি ওরাসকমের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। কায়রোতে ওরাসকম হোল্ডিংয়ের পাশের একটি হোটেলে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি তার স্বভাবসুলভ খোলামেলা আলোচনা করেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দেখা হতেই তিনি বিদেশিদের উচ্চারণে বাংলায় জিজ্ঞাসা করেন আপনারা কেমন আছেন। কেমন চলছে সব। তিনি বলেন, ঢাকাকে খুব মিস করি। আমার মেয়েতো এখনও তার স্কুলের বন্ধুদের খুঁজে ফেরে। তার জবাব আমরা দিতে পারি না। মাত্র কয়েক মাস আগেতো ঢাকা থেকে এসেছি। সেই গুলশানের রাস্তা। রিকশার ভিড়। খিচুড়ি কত খাবার মনে পড়ে। খুব মিস করি বাংলাদেশকে। দেশটি সত্যি আমার অনেক ভালো লাগে।
ওরাসকম বাংলাদেশসহ বিশ্বের সাতটি দেশে মোবাইল অপারেটর হিসেবে ব্যবসা করছে। আবু দোমা গ্রুপ সিইও’র আসন থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও টেলি প্রবৃদ্ধি অনেক কম। এখনও ৬০ শতাংশ মানুষ টেলিফোন সেবা থেকে বঞ্চিত। জনসংখ্যা এবং আয়তনের বিবেচনায় বাংলাদেশ এ খাতে এগুতে পারেনি। অথচ শিক্ষার হার অনেক বেশি। এজন্য ওরাসকম বাংলাদেশে আউটসোর্সিং এবং স্মার্ট ভিলেজ করতে আগ্রহী। এটা করা গেলে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। এজন্য চলতি মাসে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, বিটিআরসির চেয়ারম্যান এবং অন্য নীতিনির্ধারকদের এ স্মার্ট ভিলেজ দেখতে মিসরে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ালে বিনিয়োগ ওই দেশে এমনিতেই হবে। বিশেষ করে বিদ্যুতের সঙ্কট সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। যদিও বা এ সরকার বিদ্যুত্ উত্পাদনে যথেষ্ট তত্পর। তিনি বলেন, রেগুলেটরকে টেলিকম খাতের সব কিছু বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদের পলিসি দিতে হবে। তারা টাকা আয়ের দিকে নজর দেবে না। এমন পরিবেশ থাকলে সবাই বিনিয়োগ করবে। আমরা তো এখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বসে আসি।
থ্রিজিতে (তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি) বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলালিংক থ্রিজির লাইসেন্স নিতে আগ্রহী। তবে এ লাইসেন্স দেওয়ার আগে রেগুলেটর, অপারেটর এবং মন্ত্রণালয়ের এ তিন পক্ষকে বসে আলাপ-আলোচনার দরকার আছে। তারপর নীতিমালা করলে সবার জন্য ভালো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থ্রিজির পরিবর্তে বাংলালিংক ফোরজি (চতুর্থ প্রজন্মের) লাইসেন্স চাইছে, এমন গুজব শোনা যাচ্ছে। কেননা অনেক দেশে এখনই ফোরজি শুরু হয়ে গেছে। এর জবাবে তিনি বলেন, সব কিছুর একটি ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। তবে সব কিছুর আগে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। বাংলালিংক দ্বিতীয় মোবাইল অপারেটর হয়েও এখনও লাভ করতে পারছে না। অথচ রবি তৃতীয় বৃহত্ অপারেটর হয়ে লাভ করছে। কেন? এর জবাবে আবু দোমা বলেন, রবি গত দুই বছর ধরে কিছু লাভ করছে। সেবা থেকে ওরাসকম কিনে বাংলালিংক নতুনভাবে চালু হয়েছে দীর্ঘদিন হয়নি। তাছাড়া ওরাসকমের নীতি হচ্ছে একটি দেশে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা। সেই বিশাল বিনিয়োগের ফলাফলও আসে দেরিতে। বাংলাদেশে আছি এবং থাকব। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশে কত বিনিয়োগ করব, তা গতকাল (১৮ অক্টোবর) আমরা চূড়ান্ত করেছি। টাকার পরিমাণ উল্লেখ না করে এতটুকু বলতে চাই-এ অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এ সময় ওরাসকম টেলিকমের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওরাসকম ২০০৪ সালে সেবা টেলিকমের শেয়ার কিনে নেয়। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলালিংক নামে নতুনভাবে মোবাইল অপারেটরের সেবা শুরু করে ওরাসকম। বিটিআরসির ঘোষণা অনুযায়ী গত আগস্ট পর্যন্ত বাংলালিংকের গ্রাহক হচ্ছে ২ কোটি ১৬ লাখ ২১ হাজার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওরাসকমের গ্রাহক হচ্ছে ১০ কোটি ৫০ লাখের বেশি।
চলতি বছরের এপ্রিলে ওরাসকম বিশ্বের অন্যতম মোবাইল অপারেটর রাশিয়ান ভিমবার টেলিকমের সঙ্গে যোগ (মার্জ) দেয়। ফলে ভিমবার টেলিকম বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্ অপারেটরে পরিণত হয়। বিশ্বের ২১টি দেশে ভিমবার টেলিকমের ১৮ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক আছে।

- Copyright © 2013 telecom bd - Metrominimalist - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan | Distributed by Rocking Templates -