(প্রিয় টেক) শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে গেছে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) ব্যবসা নিয়ে করা খসড়া নীতিমালা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে জানিয়েছে আপাততও ভ্যাসের কোনো প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে পাঁচটি কারণ দেখিয়েছে মন্ত্রণালয়।
তবে ভ্যাস ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও খুশি হয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। শুরু থেকেই তারা এর বিরোধিতা করে আসছিল।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাফিউল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের বর্তমান টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো ও বাজার পৃথক ভ্যাস লাইসেন্সের উপযুক্ত নয়। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভ্যাসের মার্কেট এবং ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
এরপর বলা হয়েছে, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসহ সকল পক্ষের অধিকার ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করতে সকল পক্ষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, নতুন প্রযুক্তির প্রচলনসহ কর্মসংস্থান ও অন্যান্য বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে।
শেষ যুক্তি হিসেবে অবশ্য আগের চারটিসহ নতুন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে কমিটির সুপারিশ মতো পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর এই চিঠি পাঠানো হলেও বিটিআরসিতে তা এসেছে ১৬ সেপ্টেম্বর। চিঠি পেয়েই হতবাক বিটিআরসি'র সবাই। এ বিষয়ে বিটিআরসি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এমন একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয় আসলে একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিল। তারা বলেন, ভ্যাস নীতিমালার মাধ্যমে তারা দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্থায়ী সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
তবে এ বিষয়ে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আলীম বলেন, তারা এ বিষয়ে বিস্মিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে বিদেশী উদ্যোক্তাদের পক্ষেই নিল মন্ত্রণালয়। তিনি জানান, ঢাকায় এখন এমন ভ্যাস অপারেটর আছে যারা মাসে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার রেমিটেন্স অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবসাটি দেশীয়দের দেয়া হলে এই টাকা তারা দেশের মধ্যে ধরে রাখতে পারতেন বলেও দাবি করেন তিনি।
ভ্যাস বিষয়ে সরকারের এই অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জব্বারও। তিনি বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের এই খাতটিতে আরো বেশী সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছিল বিটিআরসি। কিন্তু সেই পথ বন্ধ করে দিল মন্ত্রণালয়।
তবে কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা বলেন, সরকারকে কেবল তারা তাদের কথা বলেছেন। সরকার যেটা ভালো মনে করেছে সেটিই করেছে।
কি ছিল ভ্যাস নীতিমালায়?
মোবাইলে স্বাস্থ্য সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, মোবাইল ফোনে বিল দেওয়া, টিকিট কাটা, লটারিতে ভোট দেওয়া, গান শোনাসহ নানা বিনোদনের সকল সুযোগই ভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। গত দশ বছরে দেশে গড়ে ওঠা এই সেবাগুলো সব মোবাইল অপারেটর তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে। এর আগে এ বিষয়ে কোনো লিখিত নীতিমালা ছিল না। বিটিআরসি বলছে, এক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। সেখানে নিয়ম-নীতি প্রতিষ্ঠা করতেই নীতিমালার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসি নীতিমালার যে খসড়া করেছিল তাতে বিটিআরসি বলেছিল, মোবাইল ফোন অপারেটররা ভ্যাসের নিজস্ব কোনো আয়োজন করতে পারবে না। আর এর পুরো নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতের বাইরে থাকবে। অপারেটররা কেবল তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্যে কিছু ভাড়া পাবে। এখানেই আপত্তি জানিয়েছে অপারেটররা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে এখন সব মিলে এক-দেড়'শ কোটি টাকার ভ্যাস মার্কেট রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক বিদেশী প্রতিষ্ঠান এখন এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেয়েছে।
জানা যায়, বিটিআরসি খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকেই এটি বাতিল করতে উদ্যোগ নেয় মোবাইল ফোন অপারেটররা। তারা এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তখনকার মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুও এ বিষয়ে অপারেটরদের পক্ষে অবস্থান নেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

- Copyright © 2013 telecom bd - Metrominimalist - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan | Distributed by Rocking Templates -